অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : হামাস ফিলিস্তিনি ভূখন্ডে যুদ্ধ অবসানে ব্যর্থ হওয়া যে কোনো চুক্তি প্রত্যাখ্যান এবং ইসরায়েলি নেতা বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে যুদ্ধ বিরতি চুক্তিতে ‘ব্যক্তিগতভাবে বাধাদানকারী’ হিসেবে অভিযুক্ত করার পর রোববার গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা আবার শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
চুক্তির বিষয়ে ব্রিটেনের প্রকাশিত বিবরণ অনুসারে, বিধ্বংসী সাত মাসের যুদ্ধ থামাতে চাওয়া আলোচকরা যুদ্ধে ৪০ দিনের বিরতি এবং ফিলিস্তিনি বন্দীদের জন্য জিম্মি বিনিময়ের প্রস্তাব করেছে।
কাতার, মিশর এবং মার্কিন মধ্যস্থতাকারীরা শনিবার কায়রোতে হামাসের একটি প্রতিনিধি দলের সাথে দেখা করেছে এবং আলোচনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হামাসের একটি সিনিয়র সূত্র এএফপি’কে জানিয়েছে, রোববার ‘আরেক দফা নতুন করে’ আলোচনা হবে।
উভয় পক্ষই স্থবির আলোচনার জন্য অপরকে দোষারোপ করেছে। হামাসের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা শনিবারের শেষের দিকে জোর দিয়েছিলেন, গোষ্ঠীটি গাজা থেকে ইসরায়েলের প্রত্যাহারসহ যুদ্ধের সম্পূর্ণ সমাপ্তি অন্তর্ভুক্ত না করে এমন একটি যুদ্ধবিরতিতে ‘কোন অবস্থাতেই সম্মত হবে না’।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা, ‘গাজায় আগ্রাসন বন্ধের সাথে যুক্ত না করে’ জিম্মি-মুক্তি চুক্তি নিশ্চিত করার জন্য ইসরায়েলি প্রচেষ্টার নিন্দা করেছেন। তিনি নেতানিয়াহুকে ‘ব্যক্তিগত স্বার্থের’ কারণে একটি যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর প্রচেষ্টাকে ‘ব্যক্তিগতভাবে বাধাদান’ করার জন্য অভিযুক্ত করেছেন।
একজন শীর্ষস্থানীয় ইসরায়েলি কর্মকর্তা এর আগে বলেছেন, হামাস যুদ্ধ অবসানের শর্ত ছাড়া ‘একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর সম্ভাবনাকে বাতিল করে দিয়েছে।’
জেরুজালেমে এই কর্মকর্তা এএফপি’কে বলেছেন, যুদ্ধ শেষ হবে এমন কোনো নিশ্চয়তা দিতে রাজি হয়নি ইসরায়েল।
কয়েক মাসের জোরালো কূটনীতি সত্ত্বেও মধ্যস্থতাকারীরা গত নভেম্বরে সপ্তাহব্যাপী যুদ্ধবিরতির মতো একটি নতুন যুদ্ধবিরতি করতে ব্যর্থ হয়েছে। নভেম্বরের ওই চুক্তিতে ১০৫ জন জিম্মিকে ইসরায়েলের হাতে বন্দী ফিলিস্তিনিদের বিনিময়ে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।
দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য হামাসের দাবি এবং বাস্তুচ্যুত বেসামরিক লোকে প্লাবিত দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ শহরে হামাসের অবশিষ্ট যোদ্ধাদের দমন করার জন্য নেতানিয়াহুর বারবার প্রতিশ্রুতির কারণে পূর্ববর্তী আলোচনা আংশিকভাবে স্থবির হয়ে পড়ে।
ইসরায়েল এখনও কায়রোতে প্রতিনিধি দল পাঠায়নি। ইসরায়েলি কর্মকর্তা বলেছিলেন, প্রস্তাবিত কাঠামোতে ‘ইতিবাচক সাড়া দিলেই’ প্রতিনিধি দল পাঠানো হবে।
কর্মকর্তা বলেন, ‘একটি প্রকৃত চুক্তির জন্য কঠিন এবং দীর্ঘ আলোচনা আশা করা হচ্ছে।’
হামাস পরিচালিত অঞ্চলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক আক্রমণে গাজায় কমপক্ষে ৩৪,৬৫৪ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। এদের বেশিরভাগই মহিলা এবং শিশু।
জাতিসংঘ উত্তর গাজায় একটি ‘ভয়ঙ্কর দুর্ভিক্ষ’ সম্পর্কে সতর্ক করেছে।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির নির্বাহী পরিচালক সিন্ডি ম্যাককেইন শুক্রবার প্রকাশিত একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘উত্তরে দুর্ভিক্ষ ভয়ঙ্ককরভাবে ছড়িয়ে পড়েছে এবং এটি দক্ষিণ দিকে অগ্রসর হচ্ছে।’
জাতিসংঘ বলেছে, গাজার ৭০ শতাংশেরও বেশি আবাসিক ভবন সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে এবং পুননির্মাণের জন্য এমন প্রচেষ্টার প্রয়োজন হবে যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কখনো দেখা যায়নি।
Leave a Reply